পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন?
নাস্তিকদের প্রধান অভিযোগ হল, " পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন? সৃষ্টিকর্তা থাকলে তো এত ধর্ম থাকত না! অতএব কোন সৃষ্টিকর্তা নেই! "
কেন এত ধর্ম তার ব্যাপারে তারা কখনও চিন্তাই করেনি ৷ তাই এধরনের প্রশ্ন করছে ৷
আল্লাহ কোরআনে সূরা মায়েদাহর 48 নাম্বার আয়াতে বলেন ,
সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৪৮
وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
[48] আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।
( সূরা আল মায়েদাহ)
আয়াতে আমরা দেখছি,
[1] প্রত্যেক আসমানী গ্রন্থ তার পূর্বোক্ত গ্রন্থের সত্যায়ন করে। অনুরূপ কুরআনও পূর্বোক্ত সমস্ত (আসমানী) গ্রন্থের সত্যায়ন করে।
(2) কোরআন সব গুলো আসমানী গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু সংরক্ষণ করছে ৷
অর্থাত সকল গ্রন্থ সত্য এবং প্রতিটির লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য এক ৷
(3) প্রতিটি যুগের জন্য নির্দিষ্ট আইন ছিল ৷
(4) প্রত্যেকের পরীক্ষা ভিন্ন পদ্ধতিতে নেবার জন্য আল্লাহ ইচ্ছাকৃত ভাবে সকলকে একই আইন( ধর্ম) প্রদান করেননি ৷
(5) এসব নিয়ে চিন্তা না করে কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগীতা করতে হবে ৷
(6) সকলকেই আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে হবে ৷
3 ও 4 নাম্বার point এ দেখছি প্রতিটি যুগে ভিন্ন পদ্ধতিতে মানব জাতির পরীক্ষা নেবার জন্য আল্লাহ ভিন্ন আইন ( ধর্ম) দিয়েছেন!
প্রশ্ন আসতে পারে প্রতিটি যুগের লোকদের কেন ভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হল?
দেখুন, class one এর ছাত্রের যে ধরনের প্রশ্ন, পরীক্ষার খাতা, কলম, সময় এবং পদ্ধতি হয় class ten এর ছাত্রদের একই রকম থাকে না ৷ কিছু পরিবর্তন হয় , কিছু রয়ে যায় ৷
ঠিক তেমনি ভাবে সৃষ্টির শুরুতে নবাগত মানব শ্রেনীর জন্য যেই আইন ছিল, সময়ের সাথে তার কিছু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন হয়েছে ৷ এবং এটা মেনে নেয়াও একটি পরীক্ষা ৷
মানুষের তৈরি আইনে দেখুন, 200 বছর পূর্বে ইংরেজ সরকার যে আইন প্রনয়ন করেছিল, পাকিস্থান আমলে তার অনেক গুলোই সময়ের প্রয়োজনে বদলে গেছে এবং পাকিস্থান আমলে যেই আইন ছিল এখন তার বেশির ভাগই বদলে গেছে, তাই না?
কেন বদলে গেল? অপরাধের ধরন, সমাজের পরিবর্তন, বিজ্ঞানের প্রসার ইত্যাদির কারনে পরিবর্তন করতে হয়েছে ৷
যেমন, এখন প্রিন্ট মিডিয়ার অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আইন প্রনয়ন করতে হয়েছে ৷ যা পূর্বে ছিল না ৷
ঠিক তেমনি ভাবে যেই যুগের মানুষের সমাজব্যবস্থা, রীতি - নীতি যেমন ছিল আল্লাহ তেমন আইন দিয়ে নবী প্রেরণ করেছেন ৷
যেমন আদম ( আঃ) সময় ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ বৈধ ছিল ৷ কারন তখন অন্য কোন পরিবার ছিলনা ৷ কিন্তু পরবর্তী যুগে এই নীতির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে তা বাতিল করা হয় ৷
আবার নবীর মৃত্যুর অনেক পরে যখন একটি নিয়মে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পরত এবং কিছু আইন নিজেরাই পরিবর্তন করে ফেলেত তখন আল্লাহ পুরাতন আইনের কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু সংযোজন করে নতুন নবী প্রেরন করেছেন ৷
অনেকেই তা গ্রহন করেনি, পুরাতন ধর্ম আকড়ে রেখেছিল ৷ ফলে বেড়ে গেছে ধর্মের সংখ্যা ৷
এই ধর্মের সংখ্যা বৃদ্ধিও একটি পরীক্ষা ৷ আল্লাহ দেখতে চাচ্ছেন নিজের পিতৃপুরুষের ধর্ম এবং নিয়মের প্রতি মানুষের ভালবাসা বেশি নাকি আল্লাহর প্রতি ৷
যদি পিতৃপুরুষের নীতিতে অটল থাকে তবে সে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে কিন্তু রবের নীতিতে বিশ্বাস করে দ্রুত ভাল কাজে লিপ্ত হলে নাজাত প্রাপ্ত হবে ৷
এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, " তবে কি সময়ের সাথে কোরআনের আইন পরিবর্তন করা যাবে? " না, সে সুযোগ নেই ৷ কারন আল্লাহ সূরা মায়েদাহর 3 নাম্বার আয়াতে বলে দিয়েছেন,
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। "
Comments
Post a Comment